বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়া কাতার বিশ্বকাপের অন্ধকার অধ্যায়

0
1065

বর্ণমালা ডেস্ক:

বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে নাম ওঠার পরই কাতার সরকার বিপুল বিনিয়োগ করে ফুটবল প্রতিযোগিতার জন্য। কাতারের রাজধানী দোহা সহ দেশটির সর্বত্র শুরু হয় বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম ও আনুষঙ্গিক পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ। এই কাজ করতে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার শ্রমিক বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কাতারে কাজ করতে এসেছেন। অত্যন্ত নিম্নমানের জীবনযাত্রায় তারা কাজ করছেন। শয়ে শয়ে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

২০২২ বিশ্বকাপের জন্য আটটি স্টেডিয়াম নির্ধারণ করে নিয়েছে কাতার। এর মধ্যে পাঁচটি একেবারেই আনকোরা স্টেডিয়াম। মরুভূমির প্রচণ্ড গরমে খেলার ক্লান্তি সহনীয় করে তুলতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণসহ সর্বাধুনিক সব যন্ত্রপাতি যেখানে যুক্ত। এছাড়া এসব স্টেডিয়াম স্থাপত্য নিদর্শনের দিক থেকেও চমকপ্রদ।

ফাইল ছবি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অনেক দিন থেকেই বলে আসছে, কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের নামে যা হচ্ছে, সেটা হলো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। হাজার হাজার মৃত্যুর উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি কয়েক বছর আগে বলেছিল, কাজের অমানবিক পরিবেশ এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ রকম সমালোচনার জবাবে কাতার সরকার ২০১৪ সালে খসড়া একটি শ্রমিককল্যাণ মানদণ্ড প্রণয়ণ করলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি যে আদৌ হয় নি, গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন সেই প্রমাণ আমাদের সামনে তুলে ধরছে।

গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হওয়ার অধিকার অর্জনের পর থেকে গত ১০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ—ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা থেকে কাতারে যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৬ হাজার ৫০০ জন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। অন্য হিসাবে মৃত্যুর এ হার হচ্ছে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ১২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিক মারা গেছেন ১ হাজার ১৮ জন। এ সংখ্যা খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই, কেননা প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে আছে বঞ্চনা আর প্রতারিত হওয়ার করুণ কাহিনি। গার্ডিয়ান সে রকম এক হতভাগা বাংলাদেশির উল্লেখ করেছে, যার নাম মোহাম্মদ শহীদ মিয়া।

ভাগ্যাহত শহীদ মিয়া দালালের হাতে আনুমানিক ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে কাতারে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। সেই টাকা যে ছিল পরিবারের মালিকানার সামান্য জমি বিক্রির বাইরে ধারকর্জের টাকা, তা সহজেই অনুমান করা যায়। সেখানে তিনি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। আমরা ধরে নিতে পারি, শহীদ মিয়া কাতারে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন বছর তিনেক। এ অল্প সময়ের মধ্যে ধারকর্জ করে দালালকে দেওয়া টাকার অর্থের সামান্য এক অংশই কেবল উঠে আসতে পেরেছে। শহীদ মিয়ার আত্মীয়স্বজন বলছেন, তারা এখন পরিবারের এই সদস্যের কাতারে যাওয়ার অর্থের জোগান দিতে গিয়ে ঋণভারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এবং শহীদ মিয়ার মৃত্যুতে কাতার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরণের ক্ষতিপূরণ তারা পান নি।

কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারানো লোকজনের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে কাতার সরকারের সামনে উপস্থাপন করা উচিত। কেননা, বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করতে যাওয়া একটি দেশের জন্য নির্মাণকাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। ভারত এদিক থেকে দেশের নিহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও অনেক কাঠখড় দেশটিকে এ জন্য পোড়াতে হয়েছে।

গার্ডিয়ান-এর একই প্রতিবেদনে যেমন ভারতীয় শ্রমিক মধু বোল্লাপাল্লির মৃত্যুর উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বছরখানেক আলোচনার শেষে বোল্লাপাল্লির মৃত্যুর জন্য পরিবারকে মাত্র দেড় লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে কাতারি কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই আল-কাফালা নামের ব্যবস্থা (এই ব্যবস্থার অধীনে শ্রমিকদের কাজের জায়গা বদল ও চাকরিদাতার অনুমোদন ছাড়া দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত আছে) তুলে নেওয়ার জন্য দেশটির ওপর চাপ দিয়ে আসছে। এমনকি বিশ্বকাপ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য ফিফা ও উন্নত বিশ্বে ধরনা দেওয়ার হুমকিও আইএলও একসময় দিয়েছিল।

বর্ণমালা নিউজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here