রাশেদ ৩ বছরের শিশু।হঠাৎ একদিন রাতে রাশেদের মা আবিষ্কার করলেন তার ছেলে রাত হলে চোখে কম দেখে, কিন্তু দিনে কোনো সমস্যা হয়না। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক দ্রুত রাশেদকে নিয়ে তার বাবা মা একজন পুষ্টিবিদের শরনাপন্ন হলেন। সব দেখে পুষ্টিবিদ বললেন ছেলে রাতকানা রোগে আক্রান্ত, যা “ভিটামিন এ”এর অভাবে হয়ে থাকে। দিনের আলোতে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারলেও রাতে কিছু দেখতে পায়না। দীর্ঘদিন চললে হয়তো আর চোখেই দেখতে পারতোনা। তাই তিনি তাদের সন্তানকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং ভিটামিন এ এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে শুরু করলেন–
ভিটামিন ‘ এ’ এর কাজ:
১)স্বল্প আলোয় দেখতে সাহায্য করে
২)ত্বকের কোষকে ভালো রাখে ফলে ত্বক মসৃণ থাকে
৩)শরীর গঠন এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪)হাঁড় ও দাঁত তৈরীতে সহায়তা করে।
৫)সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬)ভিটামিন ‘এ’ ইউরিনারীতে পাথর গঠিত হতে দেয় না
৭)অ্যান্থেরোস্ক্লেরোসিস, দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধক পালমুনারী রোগ এবংক্যান্সারের মত কঠিন রোগ প্রতিরোধ করে ভিটামিন‘এ’
ভিটামিন‘ এ’এর খাদ্য উৎস:
গাজর, পাকা আম, পাকা বেল, পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, কমলা, পাকা টমেটো, কলা, জাম, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, লাল শাক, লাউ, বাঁধাকপি এবংগাঢ় সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে “ভিটামিন এ”আছে ৷এছাড়াও গরুর কলিজা, মুরগির কলিজা, মাছ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, দই, ডিম, বড় মাছের তেল এবং ছোট মাছ যেমন মলা ও ঢেলা মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে।
একটি কথা: শাক জাতীয় খাবার অবশ্যই তেলে ভাজা হতে হবে,তা না হলে এর কোনো পুষ্টি মূল্য থাকেনা।
ভিটামিনএ এর অভাবজনিত রোগ:
১) রাতকানাঃ এ রোগের লক্ষণ স্বল্প আলোতে বিশেষ করে রাতে আবছা আলোতে দেখতে না পাওয়া।শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে চোখ সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২) জেরপ্থ্যালমিয়াঃ চোখের কর্নিয়ার আচ্ছাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।কর্নিয়ার উপর শুষ্কস্তর পড়ে।তখন চোখ শুকিয়ে যায় এবং পানি পড়া বন্ধ হয়ে যায়।চোখে আলো সহ্য হয়না, চোখে পুঁজ জমে এবং চোখের পাতা ফুলে যায়।এ অবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা করালে এ রোগ থেকে উপশম পাওয়া যেতে পারে।তবে সময়মতো চিকিৎসা না হলে শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩) চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
৪) চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়,ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়।
৫) আঙ্গুলের নখ ভেঙে যায়।
এছাড়াও ভিটামিন‘এ’এর অভাব ঘটলে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
বয়সভিত্তিক ভিটামিন‘এ’এর চাহিদা:
১বছর :৩০০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল
১–৬বছর :২৫০-৩০০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল
৭–১০বছর :৩০০-৪০০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল
প্রাপ্তবয়স্ক :৭৫০-৮০০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল
গর্ভাবস্থায় :৭৫০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল
স্তন্যদান কালে :১১৫০ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল
সাধারণের বোঝার সুবিধার্থে হিসাবটি আরো সহজভাবে বুঝি দিচ্ছি–প্রতি ১০০গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ এর পরিমাণ নির্দেশ করেঃ
বিভিন্ন প্রকার শাক:
- কচু শাক: ২০০০
- পুঁই শাক: ১২৪০
- লাউ শাক: ১১৯৯
- লাল শাক: ১০৫৫
- ডাটা শাক: ১০০০
- পালং শাক: ৯২২
বিভিন্ন সব্জি:
১. মিষ্টি কুমড়া: ১২০০
২. গাজর: ১০০০
বিভিন্ন প্রকার ফল:
১. পাকা আম: ১৩৮৩
২. পাকা কাঁঠাল: ৭৮৩
৩. পাকা পেঁপে: ১২৫
প্রাণীজ খাবার:
১. খাসির কলিজা: ১৪,১৪০
২. ছোট মাছ: ২০০০
৩. হাঁসের ডিম: ৩৬৯
৪. মুরগীর ডিম: ২৭০
৫. মুরগীর মাংস: ২৪৩
একেক বয়সের চাহিদা, ওজন, উচ্চতা, পেশা ও পরিশ্রম অনুযায়ী খাদ্যাভাস গ্রহণ করা উচিত আর তাই সবার উচিত ভাল একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলা।
সুস্থ্য থাকুন সঠিক খাদ্যাভাসে।