প্রখ্যাত তাবেঈ রজা বিন হায়াওয়াহ (রহ.) ছিলেন ফিলিস্তিন অঞ্চলের বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও উমাইয়া খিলাফতের মন্ত্রী। তিনি বিসয়ান (বর্তমানে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলা) শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদরিস আল-শাফেয়ি (রহ.) ১৫০ হিজরিতে ফিলিস্তিনের গাজা বা আসকালান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে মক্কায় যান এবং পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। এরপর ১০ বছর বয়সে প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা মুখস্থ করেন। ২০ বছরের কম বয়সেই তিনি ফতোয়া দেওয়ার অনুমোদন লাভ করেন। মদিনায় গিয়ে ইমাম মালিক বিন আনাস (রহ.)-এর কাছে হাদিস শিক্ষা লাভ করেন। বাগদাদে তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন আল-হাসান আল-শায়বানি (রহ.)-এর কাছে হানাফি ফিকাহ শিক্ষা করেন। ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, হাদিস ও তাফসির বিষয়ে তাঁর অগাধ দক্ষতা রয়েছে। তিনি প্রসিদ্ধ চারটি মাজহাবের একটি শাফেয়ি মাজহাবের ইমাম। ২০৪ হিজরিতে মিসরে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
ইমাম তাবরানি (রহ.) (মৃত্যু : ৩৬০ হি.)
প্রখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিস সুলায়মান বিন আহমদ আল-তাবরানি (রহ.) ২৬০ হিজরিতে ফিলিস্তিনের প্রাচীন নগরী আক্কা (বর্তমানে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহর) জন্মগ্রহণ করেন। শামের তাবরিয়া এলাকার দিকে সম্পৃক্ত করে তাঁকে তাবরানি বলা হয়। বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি শৈশব থেকেই ইলম চর্চা শুরু করেন এবং আমৃত্যু তা অব্যাহত রাখেন। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ হারামাইন, ইয়েমেন, মাদায়েন, শাম, মিসর, বাগদাদ, কুফা, বসরা, ইস্পাহানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে হাদিস বর্ণনাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁদের জীবনী সংকলন করেন। এ বিষয়ে তিনি শতাধিক খণ্ডের অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই কাজের জন্য পৃথিবীর নানা প্রান্তে তিনি ভ্রমণ করেছেন। ৩৬০ হিজরিতে ১০০ বছর বয়সে তিনি ইস্পাহান শহরে ইন্তেকাল করেন। আল-মুজামুস সাগির, আল-মুজামুল আওসাত, আল-মুজামুল কাবিরসহ অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে তাঁর।
ইমাম আল-মাকদিসি (রহ.) (মৃত্যু : ৬০০ হি.)
ইমাম আবদুল গনি আল-মাকদিসি ফিলিস্তিনের নাবলুসের জামমাইন শহরে ৫৪১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বাইতুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী হওয়ায় তাঁকে আল-মাকদিসি বলে সম্বোধন করা হয়। ইবনে কুদামাহ (রহ.)-এর ভাই শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবদেন কুদামাহ ছিলেন তাঁদের পারিবারিক অভিভাবক। তাই অল্প বয়স থেকেই তাঁর ইলমচর্চা শুরু হয়। তিনি দীর্ঘকাল যাবৎ দামেস্ক, ইস্কান্দারিয়া, বাইতুল মুকাদ্দাস, মিসর, বাগদাদ, হাররান, মসুল, ইস্পাহান, হামজানসহ অসংখ্য শহরে সফর করেছেন। শায়খ আবুল মাকারিম বিন হিলাল, সালমান বিন আলি আল-রাহবি ও আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন হামজাহ আল-কুরাশি, আবদুল কাদির আল-জিলানি (রহ.)-সহ অনেক বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিসের কাছ থেকে তিনি হাদিস ও ফিকাহ সংক্রান্ত ইলম অর্জন করেছেন। পরে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে দামেস্কে চলে যান। সেখানকার কাসইউন পর্বতে প্রথম মাদরাসা নির্মাণ করেন, যা আল-মাদরাসা আল-উমারিয়্যাহ নামে পরিচিত। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জীবনযাপনে অত্যন্ত সৎ ও বিদ্যানুরাগী হওয়ায় স্থানটি সালেহিয়্যাহ নামে পরিচিতি লাভ করে। উমদাতুল আহকাম, আল-কামাল ফি আসমাইর রিজাল, আল-মিসবাহসহ হাদিসসংক্রান্ত অনেক গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। ৬০০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। মিসরের কারাফাহ নামক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
ইমাম ইবনে কুদামাহ (রহ.) (মৃত্যু : ৬২০ হি.)
হানবালি মাজহাবের বিখ্যাত ইমাম আবদুল্লাহ বিন আহমদ ইবনে কুদামাহ (রহ.) ৫৪১ হিজরিতে ফিলিস্তিনের নাবলুসের জামমাইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৫ খণ্ড বিশিষ্ট ফিকাহবিষয়ক সর্ববৃহৎ গ্রন্থ আল-মুগনি রচনা করেছেন। ১১৪৭ সালে ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই ও জার্মানির রাজা তৃতীয় কনরাডের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ক্রসেড শুরু হয়। তখন তাঁর বাবা আহমদ ইবনে কুদামাহ পরিবার নিয়ে দামেস্কে চলে যান এবং সেখানেই ইবনে কুদামাহ পড়াশোনা করেন। শায়খ আবদুল কাদির জিলানিসহ বাগদাদে অনেক মুহাদ্দিসের কাছে তিনি হাদিস ও ফিকাহ পাঠ করেন। ইবনে কুদামাহ ও আবদুল গনি আল-মাকদিসি সম্পর্কে খালাতো ভাই ছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল ছয় মাস। হানবালি মাজহাবে উভয়ের গুরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ৫৮৩ সালে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর নেতৃত্বে ফিলিস্তিন উদ্ধার অভিযান শুরু হলে ইবনে কুদামাহ মুসলিম সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ২৭ রজব বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় পর্যন্ত তাতে অংশ নেন। ৬২০ হিজরির ঈদুল ফিতরের দিন তিনি দামেস্ক শহরে ইন্তেকাল করেন।
বর্ণমালা নিউজ।