অনলাইন মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে কেনাকাটার ল্যান্ডস্কেপ

0
367

বর্ণমালা নিউজ ডেস্কঃ

কয়েক বছর আগেও যেকোনো উৎসবে কেনাকাটা ছিল অত্যন্ত সময়বহুল এবং কষ্টসাধ্য একটা কাজ, যদিও ঈদের সময় মানুষের মাঝে অন্যরকম একটা উত্তেজনা কাজ করত। ব্যস্ত জীবনের ৭ থেকে ৮ দিন বরাদ্দ থাকতো পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে ঘরের বাজারের জন্য। চাঁদনী চক থেকে বউয়ের শাড়ি, নিউ মার্কেট থেকে বাচ্চার কাপড়- আবার  ঘরের জন্য নতুন পর্দা কিনতে চলে যেতে হতো এলিফ্যান্ট রোড। ইলেক্ট্রনিক্সের জন্য যেমন স্টেডিয়াম ছিল জনপ্রিয় তেমনি রান্নার যাবতীয় বাজারের জন্য এলাকার মুদির দোকানই ছিল শেষ ভরসা। বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া যেমন ছিল ক্লান্তিকর তেমনি ট্রাফিক জ্যামের কারণে বিরক্তিকরও ছিল বটে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বড় বড় বিপণি বিতান এর আবির্ভাবের সঙ্গে কেনাকাটার জগতে একটি পরিবর্তন দেখা যায়। একই ছাদের নিচে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী পাওয়ার সুবিধার জন্য মানুষের ঢল নামে ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি ও পরবর্তীতে যমুনা ফিউচার পার্কের মত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে। হরেক জায়গায় যাওয়ার ছোটাছুটি থেকে রেহাই পেলেও, ট্রাফিক জ্যামের কারণে সেই এক জায়গাতে পৌঁছানোর ক্লান্তি রয়েই যায়। এছাড়াও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে এ বছর ইতোমধ্যেই আমরা আট লাখের উপর কর্মঘণ্টা হারিয়ে ফেলেছি ট্রাফিক জ্যামের কারণে, যার মূল্য টাকায় দাঁড়ায় আনুমানিক ১৪০ কোটি। ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ায়, এখানে এই পথের সংগ্রাম আরও গুরুতর।

তবে বর্তমানে প্রযুক্তির অগ্রগতির কল্যাণে এ মার্কেটপ্লেস চলে এসেছে ক্রেতাদের হাতের মুঠোয়। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখার সুযোগ, সেই সঙ্গে দাম যাচাইয়ের স্বাধীনতা। ক্রেতারা সরাসরি দোকান থেকে কেনার অভিজ্ঞতা রেপ্লিকেট করতে পারছে অনলাইন এর মাধ্যমে। এর দ্বারা বিক্রেতারাও একটি সিঙ্গেল মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে দেশের যেকোনো জেলার ক্রেতাদের আরও বেশি কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তবে বহুল সুযোগ সুবিধা থাকার পরও, বাংলাদেশের ই-কমার্স পেনেট্রেশনের হার ২%-এর কম। যদিও ভারতে এ হার ৭-১০%, সিঙ্গাপুরে ২৩% এবং চীনে ৪৫%। এর মূল কারণ দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ থেকে শুরু করে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের মাঝে ডিজিটাল স্বাক্ষরতার অভাব।

এ সকল বিষয়ে উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে ই-কমার্সের পরিসীমা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে দেশের প্রভাবশালী ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলো সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছু বহুলপরিচিত নাম হচ্ছে চালডাল, সাজগোজ, রকমারি, প্রিয়সপ, দারাজ ইত্যাদি।

এর মাঝে দারাজ দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস হিসেবে খ্যাত। এখানে রয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি বিক্রেতা যাদের মাঝে ৯০%-ই  ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। এছাড়াও  ই-কমার্স সম্পর্কে আরও অবগত করে তুলতে প্রতি সপ্তাহে ৫,০০০ এরও বেশি বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এখানে। দারাজ অ্যাপে লাইভ আসার মাধ্যমে বিক্রেতারা আরও সহজে ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। এই প্লাটফর্ম ক্রেতাদের কাছে এনে দিচ্ছে ২ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি পণ্য থেকে নিজের পছন্দের জিনিসগুলো কেনার সুযোগ। নামি-দামি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ঢাকার বাইরে রাজশাহী বা টাঙ্গাইল, এমনকি সমগ্র বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো পর্যন্ত সবই পাওয়া যায় দারাজের মত অনলাইন প্লাটফর্মে।

শুধু তাই নয়, অনলাইন প্লাটফর্মের সাহায্যে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যকে বজায় রেখে কেনাকাটাকে আরও সহজতর করে তুলতে ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোতে সারা বছর-ই চলতে থাকে আকর্ষণীয় ডিলস। বিশেষ করে নভেম্বর মাস ক্রেতাদের কাছে একটি বহুল প্রতীক্ষিত সময়, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের জন্য। এরই মাঝে অন্যতম হল দারাজের আইকনিক ১১.১১ ক্যাম্পেইন। চমৎকার সব অফারগুলোর জন্য ক্রেতাগণ সারাবছর ধরে অপেক্ষা করে নভেম্বর ১১ তারিখের।

এ যেন ঈদের আগেই ইদের আমেজ! এবছরের অফারগুলোর মাঝে আছে ২০ লাখ ডিল, সর্বমোট ৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের বিশাল ডিসকাউন্ট, ফ্রি শিপিং, ৭০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট, এক্সক্লুসিভ ভাউচার, ফ্ল্যাশ সেলস সহ আরও অনেক কিছু!

এছাড়াও বিভিন্ন পেমেন্ট পার্টনারদের সাথে যুক্ত হয়ে দারাজ ক্রেতাদের কাছে আনছে ক্যাশলেস অনলাইন শপিং এর স্বাচ্ছন্দ্য। বিকাশ এবং নগদের মত পেমেন্ট পার্টনারের সাথে বিভিন্ন ব্যাংক পার্টনাররাও বিপুল লেনদেনের আশায় বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার করছে। এরই সাথে দারাজের ফ্রি ডেলিভারি এই ক্যাম্পেইনকে ক্রেতাদের জন্য একটি মেগা শপিং উৎসবে পরিণত করে।

অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর সুযোগসুবিধা ক্রেতাদের মাঝে কেনাকাটার একটি অন্যরকম প্রবণতা তৈরি করে। বিশেষ করে বড় অফারগুলার সময় সবার-ই লক্ষ্য থাকে বড় খরচগুলো অপেক্ষাকৃত স্বল্পমুল্যে সেরে ফেলার। সঞ্চয় ও উৎসবের এক চমৎকার সম্মেলন ঘটে এখানে। ঈদের বাজারও করে ফেলা যাচ্ছে নিমিষেই ঘরে বসে বা কাজের ফাঁকে।

উৎসবের এই হৈহৈ রৈরৈ কে বজায় রেখে, দারাজের প্রচেষ্টা সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতাদের দুয়ারে সবচেয়ে উন্নতমানের পণ্যগুলো পৌঁছে দেয়া। কিন্তু এরপরও অনেকের মনে সংশয়ের ছোঁয়া থেকে যায়। অনেক ক্রেতাই অনলাইনে অর্ডার করতে সংকোচ বোধ করেন ভুল পণ্য পাওয়া বা ঠকে যাওয়ার ভয়ে। ক্রেতাদের মাঝে ভরসার জায়গা তৈরি করতে এবং তাদেরকে অনলাইন কেনাকাটার জন্য উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রোডাক্ট অথেন্টিসিটি নিশ্চিত করতে, দারাজ মলে গ্যারান্টিসহ অথেন্টিক প্রোডাক্টের অফার আছে। এছাড়াও কসমেটিক্স ও মেকআপ পণ্যে নকল প্রোডাক্ট ডেলিভারি পেলে থাকছে দ্বিগুণ অর্থ ফেরতের সুযোগ। কিছু নির্ধারিত পণ্যের ক্ষেত্রে, ক্রেতা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলে মার্কেটপ্লেস তার রিটার্ন এবং রিফান্ডের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়। এর জন্য ক্রেতাদের অন্য কোনও মাধ্যমের সাথে সংযুক্ত হতে হয় না। এটি ক্রেতাদের মাঝে আস্থা তৈরি করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। এর সাথে সাথে কোনও অসাধু বিক্রেতা যাতে এই উৎসবে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে তা নিশ্চিত করতে দারাজ প্রতিনিয়ত বিক্রেতাদের মনিটর করছে এবং তাদের ডেভেলপমেন্টে আরও জোড় দিচ্ছে।

সময়মত যাতে ক্রেতাদের কাছে তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য পৌঁছে যায়, সেজন্য মার্কেটপ্লেসগুলো পর্যাপ্ত রাইডার নিয়োগ নিশ্চিত করছে। দারাজের মত বড় ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলো এসকল রাইডারদেরকে যথার্থ প্রশিক্ষণও দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ১১.১১ ক্যাম্পেইনের ভূমিকা অপরিসীম। এ বছর প্রায় ৬,০০০ লোকবল নিয়োগ হয়েছে এই ক্যাম্পেইনে যা  ই-কমার্স খাতের জন্য একটি মাইলফলক।

এখন ক্রেতাদের চিন্তা শুধুমাত্র কার্টে তাদের পছন্দের পণ্যগুলো অ্যাড করা পর্যন্তই সীমিত। কেননা ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলো ক্রেতাদের অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে করে তুলেছে আরও শোভনীয়- আরও সুরক্ষিত।

বর্ণমালা নিউজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here